মসজিদে পানাহার ও ঘুম প্রসঙ্গ
- যোবায়ের বিন জাহিদ
মসজিদ আল্লাহ তা'আলার ঘর , মুসলিম উম্মাহর দীনী সম্মেলন কেন্দ্র । ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই মুসলমানদের দীনী বিষয়গুলো মসজিদ থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে ; এমনকি মামলা-মুকাদ্দামা ও বিচারকার্যও । প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের যামানায় সাহাবায়ে কেরাম যে কোন বিপদাপদে মসজিদকেই আশ্রয়স্থল মনে করতেন । দীনী ও দুনিয়াবী যে কোন সমস্যার সমাধানে তারা মসজিদে ছুটে আসতেন । কোন কোন সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে ঘুমাতেনও । হাদীস শরীফে যার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে । বিষয়টি অজানা থাকার কারণে অনেক ভাইয়ের মনে প্রশ্ন জাগে মসজিদে ঘুমানো ও পানাহার করা বৈধ না অবৈধ ?
তাই এ নিবন্ধে আমরা মসজিদে পানাহার ও ঘুম প্রসঙ্গে হাদীস, আসার ও উলামায়ে কেরামের অভিমত তুলে ধরার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ ।
হাদীসসমূহ :
১. عن عبد الله قال حدثني نافع قال أخبرني عبد الله بن عمر " أنه كان ينام و هو شاب أعزب لا أهل له فى مسجد النبي صلى الله عليه و سلم ′
অর্থ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন , আর তখন তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক ।[সহীহ বুখারী :১/৬৩ হাদীস নং ৪৪০ ; তিরমিযি : ১/৭৩ হাদীস নং ৩২১ ; আবু দাঊদ : ১/৫৫ হাদীস নং ৩৮২ ]
২.عن سهل بن سعد قال جاء رسول الله صلى الله عليه وسلم بيت فاطمة فلم يجد عليا في البيت فقال أين ابن عمك قالت كان بيني و بينه شيء فغاضبني فخرج فلم يقل عندي فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لإنسان انظر أين هو ؟ فقال يا رسول الله هوفي المسجد راقد . فجاء رسول الله صلى الله عليه وسلم و هو مضطجع قد سقط رداؤه عن شقه و أصابه تراب فجعل رسول الله صلى الله عليه و سلم يمسحه عنه و يقول قم يا أبا تراب ، قم يا أبي تراب .
অর্থ : হযরত সাহাল ইবনে সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন ফাতেমা রা. এর গৃহে আসলনে ,তখন তিনি আলী রা. কে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, সে কোথায় ? তখন ফাতেমা রা. বললেন আমার এবং তার মঝে একটু বাক-বিতণ্ডা হয়ছেে। তাই তিনি আমার উপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক লোককে বললেন, দেখো তো সে কোথায় ? তখন লোকটি এসে বললো হে আল্লাহর রাসুল ! তিনি তো মসজিদে শুয়ে আছেন । তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে দেখলেন তিনি ধুলোমলিন অবস্থায় ঘুমিয়ে আছেন। আর তার চাদরটি শরীর থকেে পড়ে গেছে । তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার শরীর মুছে দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ওঠ হে আবূ তুরাব ! ওঠ হে আবূ তুরাব !!(মাটিওয়ালা)
[সহীহ বুখারী:১/৬৩ হাদীস ৪৪১ ,সহীহ মুসলিম:২/২৮০ হাদীস ২৪০৯]
৩. عن عائشة رضي الله عنها أن وليدة كانت سوداء لحي من العرب فأعتقوها فكانت معهم قالت فخرجت صبية لهم عليها وشاح أحمر من سود قالت فوضعته أو وقع منها فمرت به حدياة و هو ملقى فحسبته لحما فخطفته قالت فالتمسوه فلم يجدوه قالت فاتهموني به قالت فطفقوا يفتشونني حتى فتشوا قبلها قالت و الله إني لقائمة معهم إذ مرت حدياة فألقته قالت فوقع بينهم قالت فقلت هذا الذي اتهموني به زعمتم وأنا منه بريئة وهو ذا هو قالت فجائت إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم فأسلمت ، قالت عئشة رضي الله عنها فكانت لها خباء في المسجد أو حفش الخ .
অর্থ : হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, আরব দেশে কোন এক গোত্রে এক হাবশী ক্রীতদাসী ছিলো। তারা তাকে আযাদ করে দিলেও সে তাদের সাথেই থাকতাে । একদা তাদের অলংকার পরিহিতা এক মেয়ে বাহিরে চলাফেরাকালে তার অলংকারটি খুলে পড়ে গেলো বা সে নিজেই কোথাও খুলে রাখলো । এদিকে একটি চিল অলংকারটিকে মাংসপিণ্ড মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। ঐ ক্রীতদাসীর র্বণনা যে , তারপর তার অনুসন্ধান হলো । কিন্তু কোথাও না পেয়ে তারা আমাকেই দোষী মনে করে তল্লাশী শুরু করলো, এমনকি আমার লজ্জাস্থান র্পযন্ত অনুসন্ধান করলো । আমি তাদের সঙ্গেই ছিলাম হঠাৎ ঐ চিল অলংকারটি আমাদের সম্মুখে ফেলে দিলো । তখন আমি বললাম , তোমরা আমাকে যে জিনিষের জন্য সন্দেহ করছিলে এই দেখ সেই জিনিষ ! আমি সর্ম্পূণ নির্দোষ। এই ঘটনায় ঐ ক্রীতদাসী তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করলো । হযরত আয়েশা রা. বলেন তার জন্য মসজিদে একটি তাবু বানিয়ে তার থাকার ব্যবস্থা করা হলো ।[সহীহ বুখারী : ১/৬২-৬৩ হাদীস ৪৩৯]
৪. عن عائشة رضي الله عنها قالت أصيب سعد يوم الخندق في الأكحل فضرب النبي صلى الله عليه و سلم خيمة في المسجد ليعوده من قريب فلم يرعهم و في المسجد خيمة من بني غفار إلا الدم يسيل إليهم فقالو يا أهل الخيمة ما هذا الذي يأتينا من قبلكم ؟ فإذا سعد يغذو جرحه دما فمات منها .
অর্থ : হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে হযরত সা‘দ রা. এর হাতের শিরা যখম হয়েছিলো । তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে তার জন্য একটি তাবু স্থাপন করলেন, যাতে নিকট হতে তার দেখাশুনা করতে পারেন । মসজিদে গিফার গোত্রেরও একটি তাবু ছিলো । [সহীহ বুখারী : ১/৬৬ হাদীস ৪৬৩ ; আবু দাঊদ : হাদীস ৩১০১]
৫.عن عباد بن تميم عن عمه أنه رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم مستلقيا في المسجد واضعا إحدى رجليه على الأخرى ، و عن ابن شهاب عن سعيد بن المسيب كان عمر و عثمان يفعلان ذاك .
অর্থ : হযরত আব্বাদ ইবনে তামীম রা. তার চাচা থেকে র্বণনা করেন যে , তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে মসজিদে চিত হয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে শুয়ে থাকতে দেখেছেন । ইবনে শিহাব রহ. সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. থেকে র্বণনা করেন যে , উমর রা. ও উসমান রা. এমনটি করতেন ।[সহীহ বুখারী : ১/৬৮ হাদীস ৪৭৫]
৬. عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أن يعيش بن قيس بن طخفة حدثه عن أبيه و كان من أصحاب الصفة قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه و سلم انطلقوا فانطلقنا إلى بيت عائشة رضي الله عنها و أكلنا و شربنا فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم إن شئتم نمتم ههنا و إن شئتم انطلقتم إلى المسجد قال فقلنا بل ننطلق إلى المسجد .
অর্থ : হযরত আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রা. থেকে বর্ণিত, ইয়াইশ বিন কায়েস ইবনে তুখফা রা. তার পিতা থেকে র্বণনা করেন ,( তিনি আসহাবে সুফ্ফার অর্ন্তভূক্ত ছিলেন ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদেরকে বললেন চলো ! তখন আমরা আয়েশা রা. এর বাড়িতে গেলাম এবং সেখানে খাওয়া-দাওয়া করলাম । এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা চাইলে এখানে ঘুমাতে পারো অথবা মসজিদে গিয়েও ঘুমাতে পারো । তখন আমরা বললাম , বরং আমরা মসজিদে গিয়ে ঘুমাবো । [ইবনে মাজাহ :পৃ.৫৫ ; আবু দাঊদ :২/৬৮৭ হাদীস নং ৫০৪০]
৭. عن صفوان بن أمية أنه سرقت خميصة من تحت رأسه و هو نائم في مسجد النبي صلى الله عليه و سلم فأخذ اللص فجاء به إلى النبي صلى الله عليه و سلم فأمر بقطعه فقال صفوان القطعة قال فهلا قبل أن تأتيني به تركته .
অর্থ: হযরত সফওয়ান ইবনে উমাইয়া রা. থকেে বর্ণিত, তিনি একদিন চাদরের উপর মাথা রেখে মসজিদে নববীতে ঘুমাচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় তার চাদরটি চুরি হয়ে গেলো । তখন তিনি চোরকে ধরে ফেললেন এবং তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে গেলেন । তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম চোরটির হাত কাটার নির্দেশ দিলেন । তখন সফওয়ান রা. বললেন, তার হাত কাটা হবে এমনটি তো আমি চাইনি । তখন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , তাহলে আমার কাছে নিয়ে আসার আগেই তাকে ছেড়ে দিলে না কেন ? [নাসাঈ : ২/২২১ ; মুয়াত্তা ইমাম মালেক :পৃ.৩৫৩ ; আবু দাঊদ :২/৬০৩ হাদীস ৪৩৯৪]
৮.আল্লামা আইনি রহ. ‚ কিতবুল মাসাজিদ –লি আবি নুআইম“ এর হাওয়ালায় একটি হাদীস উদ্বৃত করেন, হযরত নাফে’ ইবনে যোবায়ের ইবনে মুতইম রহ. তার পিতা রা. থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস র্বণনা করেন, তোমরা মসজিদে বিশ্রামকারীকে বাধা দিওনা; মুকীমকেও না, মেহমানকেও না বা মুসাফিরকেও না।[ উমদাতুল কারী :৩/৪৬৩ ]
বিশিষ্ট তাবেয়ীদের অভিমত :
১. হারেস ইবনে আব্দুর রহমান রহ. বলেন, আমি সুলাইমান ইবনে ইয়াসার রহ. কে মসজিদে ঘুমানো সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করলাম । তখন তিনি বললেন, কিভাবে তুমি আমাকে এ সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করছো , অথচ আসহাবে সুফফারা মসজিদে ঘুমাতেন এবং সেখানেই নামাজ পড়তেন ।[মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা , হাদীস নং ৪৯৪৭]
২. ইউনুস রহ. বলেন, আমি ইবনে সীরীন রহ. কে মসজিদে ঘুমাতে দেখেছি ।[প্রগুক্ত হাদীস নং ৪৯৪৮]
৩.হাসান বছরী রহ. তার মসজিদে নামাজ পড়তেন এবং সেখানে ঘুমাতেনও ।[প্রাগুক্ত হাদীস নং ৪৯৪৯]
৪. ইবনে জুরাইজ রহ. বলনে , আমি আতা ইবনে আবি রবাহ রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম , আপনি কি মসজিদে ঘুমানো মাকরূহ মনে করেন ? তিনি বললেন, না বরং আমি তা পছন্দ করি ।[প্রাগুক্ত ,হাদীস নং ৪৯৫৩]
৫. মুগিরা ইবনে যিয়াদ রহ. বলেন , আমি মসজিদুল হারামে ঘুমাতাম । কিন্তু রাত্রে আমার একাধিকবার স্বপ্নদোষ হত । তাই আমি আতা ইবনে আবি রবাহ রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম , তখন তিনি বললেন, ঘুমাও , যদিও তোমার দশবার স্বপ্নদোষ হয় ।[প্রাগুক্ত , হাদীস নং ৪৯৫৭]
৬. সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. কে মসজিদে ঘুমানো প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তাহলে আসহাবে সুফফারা কোথায় ঘুমাতো ? র্অথাৎ মসজিদেই তো ঘুমাতো ।[প্রাগুক্ত , হাদীস নং ৪৯৫৮]
৭.ইবনে আবি নাজীহ রহ. বলনে , আমি মসজিদুল হারামে ঘুমালাম কিন্তু আমার স্বপ্নদোষ হলো , তাই আমি সাঈদ ইবনে জোবায়ের রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম । তিনি বললেন, যাও গােসল করে আসো । র্অথাৎ তিনি নিষেধ করলেন না ।[প্রাগুক্ত , হাদীস নং ৪৯৫৯]
৮. ইমাম তাবারী রহ. হাসান বছরী রহ. থেকে র্বণনা করেন , তিনি বলেন‚ আমি উসমান ইবনে আফফান রা. কে একাকী মসজিদে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছি , তার আশপাশে কেউ ছিলো না অথচ তিনি আমীরুল মু‘মিনীন ! তিনি বলেন, সালাফের একটি জামাত কোন প্রকার ওজর ছাড়াই মসজিদে ঘুমাতেন এবং সেখানে পানাহার , ঘুম ইত্যাদি সেরে নিতেন ।[উমদাতুল কারী :৩/৩৬২]
হাদীসরে আলোকে আলেমগণের অভিমত :
১. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন আলী রা. এর হাদীসের মাধ্যমে দরিদ্র এবং মুসাফির ছাড়া অন্যদের জন্যও মসজিদে ঘুমানোর বৈধতা প্রমাণিত হয় ।এমনিভাবে মসজিদে বিশ্রাম করাও । কেননা, আলী রা. ফাতেমা রা. এর কাছে বিশ্রাম করেননি অথচ মসজিদে ঘুমিয়েছেন ।[উমদাতুল কারী :৩/৪৬৩]
২. ইমাম খাত্তাবী রহ. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মসজিদে চিত হয়ে শোয়ার হাদীসের মাধ্যমে মসজিদে হেলান দেয়া , মসজিদে শোয়া এবং বিভিন্ন ধরণের বিশ্রামের বৈধতা সাব্যস্ত হয় ।[ফাতহুল বারী :১/৭০৯]
৩. আহসানুল ফাতওয়া গ্রন্থে রয়েছে , ই‘তিকাফকারী এবং মুসাফিরদের জন্য মসজিদে পানাহার করা এবং ঘুমানোর অবকাশ রয়েছে ।[আহসানুল ফাতওয়া :৬/৪৪৮]
৪.‚এমন কোন দীনী প্রয়োজন যা মসজিদে অবস্থান করা ছাড়া পুরা করা সম্ভব নয় , সেজন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয আছে । কোন কোন সাহাবায়ে কেরাম দীনী প্রয়োজনে মসজিদে রাত্রি যাপন করেছেন।[ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৫/২৩২]
৫. ‚মুসাফির এবং যার ঘর আছে , সহীহ মত অনুযায়ী তাদেরও মসজিদে ঘুমাতে কোন দোষ নেই । কেউ যদি মসজিদে পানাহার করতে এবং ঘুমাতে চায় তাহলে তার উচিত হলো ই‘তিকাফের নিয়ত করে নেয়া এরপর মসজিদে প্রবেশ করে যিকির-আযকার করা অথবা নামায পড়া এরপর যে কাজ ইচ্ছা হয় করবে “।[ফাতাওয়ায়ে আলমগিরী :৫/৩২১]
সার কথা :
এ নিবন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস , বিশিষ্ট তাবেয়ীদের অভিমত এবং উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়ার মাধ্যমে মসজিদে পানাহার করা ও ঘুমানোর বৈধতার বিষয়টি আমাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়ে উঠলো ।এর ওপর ভিত্তি করে র্বতমান গোটা বিশ্বে প্রচলিত তাবলিগী জামাতের ভাইদেরও মসজিদে পানাহার করা ও ঘুমানোর অবকাশ প্রমাণিত হয় । তবে মসজিদ যেহেতু ইবাদতের স্থান , তাই সেখানে ই‘তিকাফের নিয়তে মসজিদের আদব রক্ষা করে অবস্থান করা উচিত । আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দীনের সঠিক বুঝ দান করুন । আমীন !
- যোবায়ের বিন জাহিদ
মসজিদ আল্লাহ তা'আলার ঘর , মুসলিম উম্মাহর দীনী সম্মেলন কেন্দ্র । ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই মুসলমানদের দীনী বিষয়গুলো মসজিদ থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে ; এমনকি মামলা-মুকাদ্দামা ও বিচারকার্যও । প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের যামানায় সাহাবায়ে কেরাম যে কোন বিপদাপদে মসজিদকেই আশ্রয়স্থল মনে করতেন । দীনী ও দুনিয়াবী যে কোন সমস্যার সমাধানে তারা মসজিদে ছুটে আসতেন । কোন কোন সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে ঘুমাতেনও । হাদীস শরীফে যার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে । বিষয়টি অজানা থাকার কারণে অনেক ভাইয়ের মনে প্রশ্ন জাগে মসজিদে ঘুমানো ও পানাহার করা বৈধ না অবৈধ ?
তাই এ নিবন্ধে আমরা মসজিদে পানাহার ও ঘুম প্রসঙ্গে হাদীস, আসার ও উলামায়ে কেরামের অভিমত তুলে ধরার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ ।
হাদীসসমূহ :
১. عن عبد الله قال حدثني نافع قال أخبرني عبد الله بن عمر " أنه كان ينام و هو شاب أعزب لا أهل له فى مسجد النبي صلى الله عليه و سلم ′
অর্থ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন , আর তখন তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক ।[সহীহ বুখারী :১/৬৩ হাদীস নং ৪৪০ ; তিরমিযি : ১/৭৩ হাদীস নং ৩২১ ; আবু দাঊদ : ১/৫৫ হাদীস নং ৩৮২ ]
২.عن سهل بن سعد قال جاء رسول الله صلى الله عليه وسلم بيت فاطمة فلم يجد عليا في البيت فقال أين ابن عمك قالت كان بيني و بينه شيء فغاضبني فخرج فلم يقل عندي فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لإنسان انظر أين هو ؟ فقال يا رسول الله هوفي المسجد راقد . فجاء رسول الله صلى الله عليه وسلم و هو مضطجع قد سقط رداؤه عن شقه و أصابه تراب فجعل رسول الله صلى الله عليه و سلم يمسحه عنه و يقول قم يا أبا تراب ، قم يا أبي تراب .
অর্থ : হযরত সাহাল ইবনে সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন ফাতেমা রা. এর গৃহে আসলনে ,তখন তিনি আলী রা. কে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, সে কোথায় ? তখন ফাতেমা রা. বললেন আমার এবং তার মঝে একটু বাক-বিতণ্ডা হয়ছেে। তাই তিনি আমার উপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক লোককে বললেন, দেখো তো সে কোথায় ? তখন লোকটি এসে বললো হে আল্লাহর রাসুল ! তিনি তো মসজিদে শুয়ে আছেন । তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে দেখলেন তিনি ধুলোমলিন অবস্থায় ঘুমিয়ে আছেন। আর তার চাদরটি শরীর থকেে পড়ে গেছে । তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার শরীর মুছে দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ওঠ হে আবূ তুরাব ! ওঠ হে আবূ তুরাব !!(মাটিওয়ালা)
[সহীহ বুখারী:১/৬৩ হাদীস ৪৪১ ,সহীহ মুসলিম:২/২৮০ হাদীস ২৪০৯]
৩. عن عائشة رضي الله عنها أن وليدة كانت سوداء لحي من العرب فأعتقوها فكانت معهم قالت فخرجت صبية لهم عليها وشاح أحمر من سود قالت فوضعته أو وقع منها فمرت به حدياة و هو ملقى فحسبته لحما فخطفته قالت فالتمسوه فلم يجدوه قالت فاتهموني به قالت فطفقوا يفتشونني حتى فتشوا قبلها قالت و الله إني لقائمة معهم إذ مرت حدياة فألقته قالت فوقع بينهم قالت فقلت هذا الذي اتهموني به زعمتم وأنا منه بريئة وهو ذا هو قالت فجائت إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم فأسلمت ، قالت عئشة رضي الله عنها فكانت لها خباء في المسجد أو حفش الخ .
অর্থ : হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, আরব দেশে কোন এক গোত্রে এক হাবশী ক্রীতদাসী ছিলো। তারা তাকে আযাদ করে দিলেও সে তাদের সাথেই থাকতাে । একদা তাদের অলংকার পরিহিতা এক মেয়ে বাহিরে চলাফেরাকালে তার অলংকারটি খুলে পড়ে গেলো বা সে নিজেই কোথাও খুলে রাখলো । এদিকে একটি চিল অলংকারটিকে মাংসপিণ্ড মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। ঐ ক্রীতদাসীর র্বণনা যে , তারপর তার অনুসন্ধান হলো । কিন্তু কোথাও না পেয়ে তারা আমাকেই দোষী মনে করে তল্লাশী শুরু করলো, এমনকি আমার লজ্জাস্থান র্পযন্ত অনুসন্ধান করলো । আমি তাদের সঙ্গেই ছিলাম হঠাৎ ঐ চিল অলংকারটি আমাদের সম্মুখে ফেলে দিলো । তখন আমি বললাম , তোমরা আমাকে যে জিনিষের জন্য সন্দেহ করছিলে এই দেখ সেই জিনিষ ! আমি সর্ম্পূণ নির্দোষ। এই ঘটনায় ঐ ক্রীতদাসী তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করলো । হযরত আয়েশা রা. বলেন তার জন্য মসজিদে একটি তাবু বানিয়ে তার থাকার ব্যবস্থা করা হলো ।[সহীহ বুখারী : ১/৬২-৬৩ হাদীস ৪৩৯]
৪. عن عائشة رضي الله عنها قالت أصيب سعد يوم الخندق في الأكحل فضرب النبي صلى الله عليه و سلم خيمة في المسجد ليعوده من قريب فلم يرعهم و في المسجد خيمة من بني غفار إلا الدم يسيل إليهم فقالو يا أهل الخيمة ما هذا الذي يأتينا من قبلكم ؟ فإذا سعد يغذو جرحه دما فمات منها .
অর্থ : হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে হযরত সা‘দ রা. এর হাতের শিরা যখম হয়েছিলো । তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে তার জন্য একটি তাবু স্থাপন করলেন, যাতে নিকট হতে তার দেখাশুনা করতে পারেন । মসজিদে গিফার গোত্রেরও একটি তাবু ছিলো । [সহীহ বুখারী : ১/৬৬ হাদীস ৪৬৩ ; আবু দাঊদ : হাদীস ৩১০১]
৫.عن عباد بن تميم عن عمه أنه رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم مستلقيا في المسجد واضعا إحدى رجليه على الأخرى ، و عن ابن شهاب عن سعيد بن المسيب كان عمر و عثمان يفعلان ذاك .
অর্থ : হযরত আব্বাদ ইবনে তামীম রা. তার চাচা থেকে র্বণনা করেন যে , তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে মসজিদে চিত হয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে শুয়ে থাকতে দেখেছেন । ইবনে শিহাব রহ. সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. থেকে র্বণনা করেন যে , উমর রা. ও উসমান রা. এমনটি করতেন ।[সহীহ বুখারী : ১/৬৮ হাদীস ৪৭৫]
৬. عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أن يعيش بن قيس بن طخفة حدثه عن أبيه و كان من أصحاب الصفة قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه و سلم انطلقوا فانطلقنا إلى بيت عائشة رضي الله عنها و أكلنا و شربنا فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم إن شئتم نمتم ههنا و إن شئتم انطلقتم إلى المسجد قال فقلنا بل ننطلق إلى المسجد .
অর্থ : হযরত আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রা. থেকে বর্ণিত, ইয়াইশ বিন কায়েস ইবনে তুখফা রা. তার পিতা থেকে র্বণনা করেন ,( তিনি আসহাবে সুফ্ফার অর্ন্তভূক্ত ছিলেন ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদেরকে বললেন চলো ! তখন আমরা আয়েশা রা. এর বাড়িতে গেলাম এবং সেখানে খাওয়া-দাওয়া করলাম । এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা চাইলে এখানে ঘুমাতে পারো অথবা মসজিদে গিয়েও ঘুমাতে পারো । তখন আমরা বললাম , বরং আমরা মসজিদে গিয়ে ঘুমাবো । [ইবনে মাজাহ :পৃ.৫৫ ; আবু দাঊদ :২/৬৮৭ হাদীস নং ৫০৪০]
৭. عن صفوان بن أمية أنه سرقت خميصة من تحت رأسه و هو نائم في مسجد النبي صلى الله عليه و سلم فأخذ اللص فجاء به إلى النبي صلى الله عليه و سلم فأمر بقطعه فقال صفوان القطعة قال فهلا قبل أن تأتيني به تركته .
অর্থ: হযরত সফওয়ান ইবনে উমাইয়া রা. থকেে বর্ণিত, তিনি একদিন চাদরের উপর মাথা রেখে মসজিদে নববীতে ঘুমাচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় তার চাদরটি চুরি হয়ে গেলো । তখন তিনি চোরকে ধরে ফেললেন এবং তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে গেলেন । তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম চোরটির হাত কাটার নির্দেশ দিলেন । তখন সফওয়ান রা. বললেন, তার হাত কাটা হবে এমনটি তো আমি চাইনি । তখন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , তাহলে আমার কাছে নিয়ে আসার আগেই তাকে ছেড়ে দিলে না কেন ? [নাসাঈ : ২/২২১ ; মুয়াত্তা ইমাম মালেক :পৃ.৩৫৩ ; আবু দাঊদ :২/৬০৩ হাদীস ৪৩৯৪]
৮.আল্লামা আইনি রহ. ‚ কিতবুল মাসাজিদ –লি আবি নুআইম“ এর হাওয়ালায় একটি হাদীস উদ্বৃত করেন, হযরত নাফে’ ইবনে যোবায়ের ইবনে মুতইম রহ. তার পিতা রা. থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস র্বণনা করেন, তোমরা মসজিদে বিশ্রামকারীকে বাধা দিওনা; মুকীমকেও না, মেহমানকেও না বা মুসাফিরকেও না।[ উমদাতুল কারী :৩/৪৬৩ ]
বিশিষ্ট তাবেয়ীদের অভিমত :
১. হারেস ইবনে আব্দুর রহমান রহ. বলেন, আমি সুলাইমান ইবনে ইয়াসার রহ. কে মসজিদে ঘুমানো সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করলাম । তখন তিনি বললেন, কিভাবে তুমি আমাকে এ সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করছো , অথচ আসহাবে সুফফারা মসজিদে ঘুমাতেন এবং সেখানেই নামাজ পড়তেন ।[মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা , হাদীস নং ৪৯৪৭]
২. ইউনুস রহ. বলেন, আমি ইবনে সীরীন রহ. কে মসজিদে ঘুমাতে দেখেছি ।[প্রগুক্ত হাদীস নং ৪৯৪৮]
৩.হাসান বছরী রহ. তার মসজিদে নামাজ পড়তেন এবং সেখানে ঘুমাতেনও ।[প্রাগুক্ত হাদীস নং ৪৯৪৯]
৪. ইবনে জুরাইজ রহ. বলনে , আমি আতা ইবনে আবি রবাহ রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম , আপনি কি মসজিদে ঘুমানো মাকরূহ মনে করেন ? তিনি বললেন, না বরং আমি তা পছন্দ করি ।[প্রাগুক্ত ,হাদীস নং ৪৯৫৩]
৫. মুগিরা ইবনে যিয়াদ রহ. বলেন , আমি মসজিদুল হারামে ঘুমাতাম । কিন্তু রাত্রে আমার একাধিকবার স্বপ্নদোষ হত । তাই আমি আতা ইবনে আবি রবাহ রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম , তখন তিনি বললেন, ঘুমাও , যদিও তোমার দশবার স্বপ্নদোষ হয় ।[প্রাগুক্ত , হাদীস নং ৪৯৫৭]
৬. সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. কে মসজিদে ঘুমানো প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তাহলে আসহাবে সুফফারা কোথায় ঘুমাতো ? র্অথাৎ মসজিদেই তো ঘুমাতো ।[প্রাগুক্ত , হাদীস নং ৪৯৫৮]
৭.ইবনে আবি নাজীহ রহ. বলনে , আমি মসজিদুল হারামে ঘুমালাম কিন্তু আমার স্বপ্নদোষ হলো , তাই আমি সাঈদ ইবনে জোবায়ের রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম । তিনি বললেন, যাও গােসল করে আসো । র্অথাৎ তিনি নিষেধ করলেন না ।[প্রাগুক্ত , হাদীস নং ৪৯৫৯]
৮. ইমাম তাবারী রহ. হাসান বছরী রহ. থেকে র্বণনা করেন , তিনি বলেন‚ আমি উসমান ইবনে আফফান রা. কে একাকী মসজিদে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছি , তার আশপাশে কেউ ছিলো না অথচ তিনি আমীরুল মু‘মিনীন ! তিনি বলেন, সালাফের একটি জামাত কোন প্রকার ওজর ছাড়াই মসজিদে ঘুমাতেন এবং সেখানে পানাহার , ঘুম ইত্যাদি সেরে নিতেন ।[উমদাতুল কারী :৩/৩৬২]
হাদীসরে আলোকে আলেমগণের অভিমত :
১. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন আলী রা. এর হাদীসের মাধ্যমে দরিদ্র এবং মুসাফির ছাড়া অন্যদের জন্যও মসজিদে ঘুমানোর বৈধতা প্রমাণিত হয় ।এমনিভাবে মসজিদে বিশ্রাম করাও । কেননা, আলী রা. ফাতেমা রা. এর কাছে বিশ্রাম করেননি অথচ মসজিদে ঘুমিয়েছেন ।[উমদাতুল কারী :৩/৪৬৩]
২. ইমাম খাত্তাবী রহ. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মসজিদে চিত হয়ে শোয়ার হাদীসের মাধ্যমে মসজিদে হেলান দেয়া , মসজিদে শোয়া এবং বিভিন্ন ধরণের বিশ্রামের বৈধতা সাব্যস্ত হয় ।[ফাতহুল বারী :১/৭০৯]
৩. আহসানুল ফাতওয়া গ্রন্থে রয়েছে , ই‘তিকাফকারী এবং মুসাফিরদের জন্য মসজিদে পানাহার করা এবং ঘুমানোর অবকাশ রয়েছে ।[আহসানুল ফাতওয়া :৬/৪৪৮]
৪.‚এমন কোন দীনী প্রয়োজন যা মসজিদে অবস্থান করা ছাড়া পুরা করা সম্ভব নয় , সেজন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয আছে । কোন কোন সাহাবায়ে কেরাম দীনী প্রয়োজনে মসজিদে রাত্রি যাপন করেছেন।[ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৫/২৩২]
৫. ‚মুসাফির এবং যার ঘর আছে , সহীহ মত অনুযায়ী তাদেরও মসজিদে ঘুমাতে কোন দোষ নেই । কেউ যদি মসজিদে পানাহার করতে এবং ঘুমাতে চায় তাহলে তার উচিত হলো ই‘তিকাফের নিয়ত করে নেয়া এরপর মসজিদে প্রবেশ করে যিকির-আযকার করা অথবা নামায পড়া এরপর যে কাজ ইচ্ছা হয় করবে “।[ফাতাওয়ায়ে আলমগিরী :৫/৩২১]
সার কথা :
এ নিবন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস , বিশিষ্ট তাবেয়ীদের অভিমত এবং উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়ার মাধ্যমে মসজিদে পানাহার করা ও ঘুমানোর বৈধতার বিষয়টি আমাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়ে উঠলো ।এর ওপর ভিত্তি করে র্বতমান গোটা বিশ্বে প্রচলিত তাবলিগী জামাতের ভাইদেরও মসজিদে পানাহার করা ও ঘুমানোর অবকাশ প্রমাণিত হয় । তবে মসজিদ যেহেতু ইবাদতের স্থান , তাই সেখানে ই‘তিকাফের নিয়তে মসজিদের আদব রক্ষা করে অবস্থান করা উচিত । আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দীনের সঠিক বুঝ দান করুন । আমীন !
Comments
Post a Comment